শশী লজ
শশীলজ | |
---|---|
স্থানীয় নাম ময়মনসিংহ রাজবাড়ী | |
![]() মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ী | |
স্থানাঙ্ক | ২৪°২৭′১১″ উত্তর ৯০°১৪′০৫″ পূর্ব / ২৪.৪৫৩১° উত্তর ৯০.২৩৪৮° পূর্ব |
নির্মিত | ১৯০৫ |
ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থল |
শশী লজ বা শশীলজ, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ী, যা ময়মনসিংহের রাজবাড়ী নামেও সমধিক খ্যাত।[১] শহরের কেন্দ্রস্থলে, ব্রহ্মপুত্র নদের অদূরে, এই রাজবাড়ী অবস্থিত। ১৯৫২ সাল থেকে শশী লজ ব্যবহৃত হচ্ছে মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে। ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল জাদুঘর স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শশী লজটি অধিগ্রহণ করে।[২]
ইতিহাস[সম্পাদনা]
![](http://chped.net/https/upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/4c/Afridito.jpg/220px-Afridito.jpg)
মুক্তাগাছা জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর তৃতীয় উত্তরপুরুষ রঘুনন্দন আচার্য চৌধুরী নিঃসন্তান ছিলেন। অথচ পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী, সম্পত্তি সংরক্ষণে সক্ষম একটি পুত্রসন্তান ভীষণভাবে প্রয়োজন। তাই দত্তক পুত্র গ্রহণের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন তিনি। গৌরীকান্ত আচার্য চৌধুরীকে দত্তক নিলেন রঘুনন্দন। মৃত্যুর আগে দত্তক পুত্রের হাতে জমিদারির ভার অর্পণ করেন।[২]
জমিদার গৌরীকান্ত আচার্য চৌধুরীর প্রতিও সদয় ছিল না নিয়তি। সন্তানহীন অবস্থায় অকালপ্রয়াণ ঘটল তাঁরও। গৌরীকান্তের বিধবা পত্নী বিমলা দেবী দত্তক নিলেন কাশীকান্তকে। কাশীকান্তের কপালও মন্দ ছিল ভীষণ। দীর্ঘ রোগযন্ত্রণায় ভুগে সন্তানহীন অবস্থায় পরলোকগমন করলেন তিনিও। তাঁর বিধবা পত্নী লক্ষ্মী দেবী আচার্য চৌধুরানী পূর্বসূরিদের পথ অনুসরণ করে দত্তক নিলেন চন্দ্রকান্তকে। ভাগ্যের বিরুদ্ধাচরণে চন্দ্রকান্তও অতিদ্রুত ত্যাগ করলেন পৃথিবীর মায়া। তবে হাল ছাড়লেন না লক্ষ্মী দেবী। পুনরায় দত্তক নিলেন তিনি। দ্বিতীয় দত্তক পুত্রের পূর্বনাম পূর্ণচন্দ্র মজুমদার। কুলগুরুর সামনে মহাসমারোহে লক্ষ্মী দেবী নতুন নাম রাখলেন পুত্রের—সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। [২]
সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর শাসনামলে ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী জনপদে যুক্ত হলো সোনালি মাত্রা। প্রায় ৪১ বছর জমিদারি পরিচালনার প্রশস্ত প্রেক্ষাপটে বহু জনহিতকর কাজ করলেন তিনি। ময়মনসিংহে স্থাপন করলেন একাধিক নান্দনিক স্থাপনা। ঊনবিংশ শতকের শেষপাদে ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে নয় একর ভূমির ওপর একটি অসাধারণ দ্বিতল ভবন নির্মাণ করলেন সূর্যকান্ত। নিঃসন্তান সূর্যকান্তের দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে এই ভবনের নাম রাখা হলো শশী লজ। বিখ্যাত এই ভবনটি ১৮৯৭ সালের ১২ জুন গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হলে অত্যন্ত ব্যথিত হন সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। ১৯০৫ সালে ঠিক একই স্থানে নতুনভাবে শশী লজ নির্মাণ করেন পরবর্তী জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী। ১৯১১ সালে শশী লজের সৌন্দর্যবর্ধনে তিনি সম্পন্ন করেন আরও কিছু সংস্কারকাজ। নবীন জমিদারের প্রাণান্ত প্রয়াসে শশী লজ হয়ে ওঠে অনিন্দ্যসুন্দর, অপরূপ। [২]
বিবরণ[সম্পাদনা]
পুরো বাড়িটি ৯ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। মূল বাড়িটি নির্মাণ করেন মহারাজা সূর্যকান্ত। পরবর্তিতে তাঁর দত্তকপুত্র শশীকান্ত প্রাসাদটি পুণর্নিমাণ করেন কারণ সূর্যকান্তের নির্মিত প্রাসাদটি ভূমিকম্পে আংশিক বা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল। শশীলজের মূল ফটকে রয়েছে ১৬টি গম্বুজ। ভেতরে প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে ছাদ থেকে ঝুলন্ত, প্রায় একই রকম দেখতে বেশ কয়েকটি ঝাড়বাতি। সাধারণ বাসভবন ছাড়াও বাড়িটিতে আছে নাচঘর, স্নানঘর। স্নানঘরে রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ। ধারণা করা হয় এই সুড়ঙ্গপথে মুক্তাগাছা যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মূল ভবনের পেছনভাগেও রয়েছে একটি স্নানঘর। পিছনের স্নানঘরটি দোতলা। এই স্নানঘরে বসে রানী পাশের পুকুরে হাঁসের খেলা দেখতেন। পুকুরটির ঘাট মার্বেল পাথরে বাঁধানো। শশীলজের মূল ভবনের সামনে রয়েছে বাগান। সেই বাগানের মাঝখানে আছে শ্বেতপাথরের ফোয়ারা, যার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গ্রিক দেবী ভেনাসের স্বল্পবসনা স্নানরতা মর্মর মূর্তি। বাগানের ঠিক পেছনেই লালচে ইট আর হলুদ দেয়ালে নির্মিত শশী লজ। এর পাশেই রয়েছে পদ্মবাগান। এই ভবনের পূর্বপ্রান্তের ঘরটি বর্তমানে ব্যবহূত হয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষের কার্যালয় হিসেবে [২][৩][৪] শশী লজের অন্দরে বারান্দা অতিক্রম করে কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেরোলেই রঙ্গালয়। সুদৃশ্য সেই রঙ্গালয়ের এক প্রান্তে বিশ্রামঘর। বিশ্রামঘরের পর কাঠের মেঝেযুক্ত হলঘর। হলঘরের পাশেই বর্ণিল মার্বেল পাথরে নির্মিত আরেকটি জলফোয়ারা। জলফোয়ারার ঠিক ওপরের ছাদ থেকে নিচে ঝোলানো স্ফটিকস্বচ্ছ কাচের ঝাড়বাতি। ভবনটির পেছনে একচিলতে উঠান। সবুজ ঘাসের আঁচল পাতা সেই উঠান পেরোলে একটি অপরিসর জলাশয়। জলাশয়ের পূর্ব ও পশ্চিম পারে দুটি জরাজীর্ণ ঘাট থাকলেও দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দ্বিতল স্নানঘাটটির সৌন্দর্য সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ।[২]
প্রকৃতি[সম্পাদনা]
বাড়িটির আশেপাশে রয়েছে বেশকিছু দুষ্প্রাপ্য ও প্রচীন গাছগাছালি;- আছে দুষ্প্রাপ্য নাগলিঙ্গম, যা তখন হাতির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আছে পদ্মবাগান।[৩][৪]
জনপ্রিয় মাধ্যমে উপস্থাপনা[সম্পাদনা]
এই শশীলজেই ধারণ করা হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও নওয়াজীশ আলী খান পরিচালিত বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক অয়োময়-এর পর্বগুলো, যা বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছিল। নাটকে এটি ছিল জমিদারের বাড়ি। মূলত এই নাটকের পরিচিতির পরেই স্থানীয়দের কাছে বাড়িটি "জমিদারবাড়ি" হিসেবে পরিচিতি পায়। এছাড়াও রাখাল বন্ধু (২০০৩) নামে আরেকটি ধারাবাহিক নাটকের শ্যুটিংও এই ভবনটিতে হয়েছিল।[৪]
চিত্রশালা[সম্পাদনা]
-
শশী লজ
-
শশী লজের তোরণ
-
শশী লজের প্রধান প্রবেশদ্বার
-
শশী লজের সামনে রাস্তা
-
শশী লজের পেনরেমিক দৃশ্য
-
শশী লজের স্নান ঘাট
-
শশীলজ
-
শশী লজ
-
স্নানঘর
-
ভেনাসের মূর্তি
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "ময়মনসিংহ বিভাগের পুরাকীর্তি"। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। http://www.archaeology.gov.bd/। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
|প্রকাশক=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ময়মনসিংহ শশী লজ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ জুলাই ২০১৭ তারিখে, দীপংকর চন্দ, দৈনিক সমকাল। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১০-০৮-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ ক খ শশী লজ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১০-০৮-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ ক খ গ অয়োময়ের সেই জমিদারবাড়ি, নওরীণ সুলতানা; ক্রোড়পত্র নকশা, দৈনিক প্রথম আলো; প্রকাশকাল ২০০৩; সংগ্রহের তারিখ: ৬ জানুয়ারি ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।
![](http://chped.net/https/upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/4a/Commons-logo.svg/30px-Commons-logo.svg.png)