বানৌজা আবু উবাইদাহ
ইতিহাস | |
---|---|
বাংলাদেশ | |
নাম: | বানৌজা আবু উবাইদাহ |
নির্মাণাদেশ: | জুন, ২০১৮ |
নির্মাতা: | হুডং পোতাঙ্গন, সাংহাই |
অভিষেক: | ডিসেম্বর, ১৯৯৯ |
অর্জন: | ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ |
কমিশন লাভ: | ৫ নভেম্বর, ২০২০ |
শনাক্তকরণ: | এফ ১৯ |
অবস্থা: | সক্রিয় |
সাধারণ বৈশিষ্ট্য | |
প্রকার ও শ্রেণী: | বিবর্তিত টাইপ ০৫৩এইচ৩ ফ্রিগেট |
ওজন: |
|
দৈর্ঘ্য: | ১১২ মি (৩৬৭.৫ ফু) |
প্রস্থ: | ১২.৪ মি (৪০.৭ ফু) |
ড্রাফট: | ৪.৩ মি (১৪.১ ফু) |
প্রচালনশক্তি: |
|
গতিবেগ: | ২৫ নট (৪৬ কিমি/ঘ; ২৯ মা/ঘ) |
সীমা: | ৫,০০০ মা (৮,০০০ কিমি), ১৫ থেকে ১৬ নট (২৮ থেকে ৩০ কিমি/ঘ) গতিতে |
লোকবল: | ১৬৮ জন(৩০ জন কর্মকর্তা) |
সেন্সর এবং কার্যপদ্ধতি: |
|
যান্ত্রিক যুদ্ধাস্ত্র ও ফাঁদ: |
|
রণসজ্জা: |
|
বিমান বহন: | অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড এডাব্লিউ ১০৯ কপ্টার |
বিমানচালানর সুবিধাসমূহ: | হ্যাঙ্গার |
বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ (সংক্ষেপেঃ বানৌজা) আবু উবাইদাহ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি টাইপ ০৫৩এইচ৩ ফ্রিগেট। যা ইতোপূর্বে চীনের সশস্ত্র বাহিনী 'পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি'র' 'ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড' কর্তৃক ব্যবহৃত দ্বিতীয় প্রজন্মের ফ্রিগেট। ফ্রিগেটটি চীনের সাংহাইয়ে অবস্থিত জিয়াঙ্গান পোতাঙ্গনে নির্মিত। এর পূর্ব নাম জিয়া জিং (হাল ৫২১)।[১] এই ফ্রিগেট বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহুমাত্রিক যুদ্ধ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ফ্রিগেট। ফ্রিগেটটি বাংলাদেশ সরকারের 'ফোর্সেস গোল' ২০৩০ -এর আওতায় নৌবাহিনীর ত্রিমাত্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নৌবহরে সংযোজন করা হয়েছে।[২][৩][৪][৫][৬][৭]
ইতিহাস[সম্পাদনা]
টাইপ ০৫৩এইচ৩ এই ফ্রিগেটটি ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি'র পূর্ব সাগর নৌবহরে 'পুতিয়ান' নামে যুক্ত হয়। ২০১৯ সালে 'লিয়ানইয়ুঙ্গাং' নামে আরেকটি ফ্রিগেট সহ এই ফ্রিগেটটিকে বিমুক্ত করে এবং সংস্কার করতে জিয়াঙ্গান পোতাশ্রয়ে পাঠায়। জুন ২০১৮-তে বাংলাদেশ নৌবাহিনী চীন হতে দুইটি ফ্রিগেট ক্রয়ের চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী 'পুতিয়ান' ও 'লিয়ানইয়ুঙ্গাং' ফ্রিগেট সংস্কার করে ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।[১][৮][৯] বাংলাদেশ নৌবাহিনী সংস্কারকৃত 'পুতিয়ান' ও 'লিয়ানইয়ুঙ্গাং'-এর নাম পরিবর্তন করে বানৌজা আবু উবাইদাহ ও বানৈজা ওমর ফারুক রাখে। ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে সমরযান দুইটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে[১০] চীনের জানজিয়াং বন্দর ও মালয়েশিয়ার ক্লাং বন্দর হয়ে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার সমদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ৯ জানুয়ারি,২০২০ তারিখে নৌবাহিনীর মংলা পোতাশ্রয়ে নোঙ্গর করে।[১১] ৫ নভেম্বর, ২০২০-এ জাহাজটি নৌবহরে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত করা হয়।[১২][১৩]
বৈশিষ্ট্য ও যান্ত্রিক কাঠামো[সম্পাদনা]
ফ্রিগেটটি দৈর্ঘ্যে ১১২ মিটার এবং প্রস্থে ১২.৪ মিটার যা প্রাথমিক অবস্থায় ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২৪ নটিক্যাল মাইল গতিতে পরিভ্রমণ যোগ্যতা সম্পন্ন ছিল।[১০][৮][১১] কমিশন লাভের সময় জাহাজটির গতিবেগ ২৫ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত করা হয়।[১৪] ফাঁকা অবস্থায় এর ওজন ২২৫০ টন। লোকবল ছাড়া পূর্ণ সমরসজ্জাসহ এর ফ্রিগেটটি ২৩৯৩ টন ভর বহন করতে পারে। এতে ২ শ্যাফট বিশিষ্ট প্রপেলার রয়েছে। 'কম্বাইন্ড ডিজেল এন্ড ডিজেল' ইঞ্জিনের মাধ্যমে এর প্রচালন শক্তি উৎপন্ন হয়। এছাড়াও এতে অত্যাধুনিক সারভাইলেন্স র্যাডার, অগ্নি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, গোলানিক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সাবমেরিন বিধ্বংসী রকেট, র্যাডার জামিং ব্যবস্থা ব্যবস্থা রয়েছে।[২] ফ্রিগেটটি একটি 'অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড এডাব্লিউ ১০৯' হেলিকপ্টার বহন করতে পারে।
রণসজ্জা[সম্পাদনা]
ফ্রিগেটটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কামান, ভূমি থেকে আকাশে এবং ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত। ফ্রিগেটটির রণসজ্জায় নিম্নোক্ত সমরাস্ত্র রয়েছে[৮]-
- ২টি ৪ কোষ বিশিষ্ট ৮টি সি-৮০২এ ক্ষেপণাস্ত্র। জাহাজ থেকে শত্রু জাহাজে বা ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য এই ক্ষেপণাস্ত্র ১২০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম।
- ২টি ১৫ ব্যারেল বিশিষ্ট 'টাইপ ৯৪৬/পিজে-৪৬' ডিকয় রকেট লঞ্চার যা শত্রু নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার সক্ষমতা রাখে।
- ৮ কোষ বিশিষ্ট ১টি এফএম-৯০ ক্ষেপণাস্ত্র। যা জাহাজ বা ভূমি থেকে আকাশে থাকা শত্রু বিমানে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র।
- ১টি 'পিজে ৩৩এ দ্বৈত ১০০ মিমি নেভাল গান' বা কামান যা সমুদ্র তটবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে কার্যকর কামান।
- ৪টি 'টাইপ ৭৬ দ্বৈত ৩৭ মিমি এএ গান' বা কামান যা সমুদ্র তটবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে কার্যকর কামান।
- ২টি ৬ টিউব বিশিষ্ট 'টাইপ ৩২০০ এএসডাব্লিউ' রকেট লঞ্চার ও
- ২টি 'ডেপথ চার্জ র্যাকস' যা নিমজ্জিত সাবমেরিনে আঘাত করতে পারে।
অভিযান ও মহড়া[সম্পাদনা]
কমিশন লাভের পর বানৌজা আবু উবাইদাহ ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হতে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে প্রশিক্ষণ সফর করে।[১৫] ২০২২ সালের ২২ হতে ২৭ মে পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সমুদ্রসীমার নির্ধারিত এলাকায় ভারতীয় নৌবাহিনীর আইএনএস কোরা ও আইএনএস সুমেধা এবং বানৌজা আলী হায়দারের সাথে যৌথ টহল ‘করপ্যাট-৪’ ও দ্বিপাক্ষিক মহড়া ‘বঙ্গোসাগর’-এ অংশ নিয়েছে।[১৬]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ "Bangladesh Navy receives two Chinese frigates"। চায়না মিলিটারি (ইংরেজি)। ২০১৯-১২-২০। ২০১৯-১২-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২৩।
- ↑ ক খ "মোংলায় নৌ-বাহিনীতে 'ওমর ফারুক-আবু উবায়দাহ'"। সময় টিভি। ২০২০-০১-০৯। ২০২০-০৩-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২৫।
- ↑ "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বানৌজা এর কমিশনিং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ"। ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২৩।
- ↑ "Five Bangladesh Navy Ship commissioning audio visual"। ৩১ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "navy ship Bangladesh Navy KGF CHAPTER"। ৭ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২৩।
- ↑ "TENDER SPECIFICATION OF SPARE PARTS FOR MAIN ENGINE (BRAND: HUDONG) - BNS ABU UBAIDAH" (পিডিএফ)। Directorate General of Defence Purchase (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৭-২৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১৮।
- ↑ "BANGLADESH NAVY ANIRBAN 2023"। ২৬ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২৩।
- ↑ ক খ গ "China hands over two ex-PLAN frigates to Bangladesh Navy"। www.janes.com। ২০২০-০৩-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২৩।
- ↑ "Bangladesh Navy receives two Chinese frigates"। www.navyrecognition.com। ২০১৯-১২-২০। ২০২০-০৫-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২৩।
- ↑ ক খ "বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে চীনের সাংহাই বন্দর ত্যাগ করেছে নৌবাহিনীর জাহাজ ওমর ফারুক এবং আবু উবাইদাহ"। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর। ২০১৯-১২-২৩। ২০২০-০৫-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২৩।
- ↑ ক খ "গণচীন হতে দেশে পৌঁছেছে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ 'ওমর ফারুক' ও 'আবু উবাইদাহ'"। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর। ২০২০-০১-০৯। ২০২০-০৫-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২৩।
- ↑ "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌবাহিনীর নতুন পাঁচটি আধুনিক জাহাজ কমিশনিং করেন…"। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ। ২০২০-১১-০৫। ২০২০-১১-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১১।
- ↑ "নৌবাহিনীতে যুক্ত হলো আধুনিক ৫ জাহাজ"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০২০-১১-০৫। ২০২০-১১-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১১।
- ↑ "নৌবাহিনীর নতুন তিনটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ 'ওমর ফারুক', 'আবু উবাইদাহ', 'প্রত্যাশা', এবং দুইটি জরিপ জাহাজ 'দর্শক'এবং 'তল্লাশী'এর কমিশনিং করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা"। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর। ২০২০-১১-০৫। ২০২২-০৭-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২৭।
- ↑ "শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে প্রশিক্ষণ সফর শেষে দেশে ফিরেছে নৌবাহিনী যুদ্ধজাহাজ আবু উবাইদাহ"। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর। ২০২২-০১-০৫। ২০২২-০৩-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২৭।
- ↑ "'করপ্যাট' টহলে অংশ নিয়ে মোংলায় এলো ভারতীয় দুই জাহাজ"। জাগো নিউজ। ২০২২-০৫-২৪। ২০২২-০৭-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-২৭।