নৌকা জাদুঘর
স্থাপিত | ২০১৪ |
---|---|
অবস্থান | সিআইটি রোড, কাঁকুড়গাছি, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ |
স্থানাঙ্ক | ২২°৩৪′৫৬″ উত্তর ৮৮°২৩′২৮″ পূর্ব / ২২.৫৮২২৭০৫° উত্তর ৮৮.৩৯১০৪৫৫° পূর্ব |
ধরন | পরিবহন |
পরিচালক | প্রসেনজিৎ দেব বর্মণ[১] |
মালিক | অন্যান্য সাংস্কৃতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান (পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর শ্রেণির কল্যাণ বিভাগের অধীন) |
নিকটতম গণপরিবহন সুবিধা | ৩এ বাস টার্মিনাস |
ওয়েবসাইট | বোট মিউজিয়াম - কলকাতা |
নৌকা জাদুঘর[২] কলকাতার কাঁকুড়গাছির সিআইটি রোডে অবস্থিত একটি জাদুঘর। এটি ভারেত প্রথম নৌকা যাদুঘর[৩][৪] এবং শহরের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। জাদুঘরটি ২০১৪ সালে আম্বেদকর ভবনে স্থাপন করা হয়। এটি বোট মিউজিয়াম হিসাবে অধিক পরিচিত।
জাদুঘরটি প্রদর্শনের জন্য দর্শনার্থীদের থেকে কোন অর্থ গ্রহণ করা হয় না। এখানে ৪৬ প্রকারের নৌকার রেপ্লিকা রয়েছে।[২] সমস্ত রেপ্লিকাগুলি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কাঠের কারুকর্মের রাজবংশি শিল্পী দ্বারা তৈরি করা হয়। জাদুঘরটি মঙ্গলকাব্যে উল্লেখিত নৌকা থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের নৌকার রেপ্লিকা দ্বারা সজ্জিত।
ইতিহাস[সম্পাদনা]
বাংলার নৌকা প্রস্তুতকারীদের প্রকৌশলের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকার পরেও, তারা সাধারণ জ্ঞান ও অনুশীলনের মাধ্যমে নৈপুণ্যে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। ঐতিহ্যবাহী নৌকা নির্মাণ এমন একটি জ্ঞান, যা ‘গুরু-গুরু পরম্পরা’ শৈলীতে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে প্রসারিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, দ্রুতগতির পরিবহন ব্যবস্থার জন্য ঐতিহ্যবাহী অন্যান্য নৌকার মত অনেক বর্তমান সময়ের নৌকাগুলিও মতোই হারিয়ে যাওয়ার পথে।[৫]
জাদুঘর গড়ে তোলার পূর্বে স্বরূপ ভট্টাচার্যের তত্বাবধানে দীর্ঘ গবেষণা চালানো হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের তফশিলি জাতিভুক্ত কারিগররা নিখুঁত ভাবে প্রতিটি নৌকো তৈরির করেছিলেন। জাদুঘরটি পশ্চিমবঙ্গের অনগ্রসর কল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে তৎকালীন মন্ত্রী ডঃ উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ২০১৪ সালে উদ্বোধন করেন। জাদুঘরের পোশাকি নাম, ‘হেরিটেজ বোটস অব বেঙ্গল’।[৬]
সংগ্রহ[সম্পাদনা]
এই জাদুঘরে দুই বাংলার নৌকোসম্ভারের মডেল সংরক্ষিত রয়েছে। প্রতিটি মডেলের সঙ্গে উল্লেখ রয়েছে নৌকোর মাপ, কোথায় সেসব ব্যবহার হয় বা একসময় হতো, কতদিন আগে কী কাজে ব্যবহার করা হত, তার তথ্যপঞ্জি। একই ধরনের যাত্রীবাহী অথবা মালবাহী নৌকোর চেহারা আবার অঞ্চলবিশেষে একেক রকম। উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের নদীর নাব্যতা আলাদা হওয়ায় তাদের নির্মাণশৈলীও আলাদা। পূর্ববঙ্গ-পশ্চিমবঙ্গের নৌকার মধ্যেও রয়েছে তেমন ফারাক। আবার খালবিলে যে নৌকো চলে, তার সঙ্গে বিস্তর ফারাক উপকূলবর্তী অঞ্চলের নৌকোর। মাছ ধরার জন্য তৈরি নৌকো আর প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য তৈরি নৌকোর ধাঁচও একেবারেই আলাদা। জাদুঘরে হরপ্পা যুগের নৌকা থেকে আধুনিক যুগের নৌকা প্রদর্শিত হয়। এখানে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পাশাপাশি কেরল ও তামিলনাড়ুর নৌকার মডেলও সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে।[৭] পানসি নামের একটি নৌকার প্রতিরূপ ১৮ শতকের অঙ্কিত চিত্র থেকে তৈরি করা হয়।[৫]
প্রদর্শনী কক্ষ[সম্পাদনা]
প্রদর্শনী কক্ষে ৪৬ টি নৌকা প্রদর্শিত হয়। কক্ষের মাঝখানে একটি বড় আকারের নৌকা প্রদর্শিত হয়। জাদুঘরে ছিপ, ছোট, ডিঙি ছাড়াও রয়েছে কাইলে বাছারি, খেয়া, খোরোকিস্তি, পানসি, তালাইয়ের মতো বাংলার ছোট ছোট নৌকার রেপ্লিকার সাথে বৃহৎ আকারের আবার ময়ূরপঙ্খীর রেপ্লিকাও প্রদর্শিত। এখানে হরপ্পা সভ্যতার একটি নৌকার রেপ্লিকাও রয়েছে। জাদুঘরটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বজরা ‘পদ্মা’-র রেপ্লিকাও প্রদর্শিত হয়।[৮]
প্রদর্শনের সময় ও প্রবেশ মূল্য[সম্পাদনা]
জাদুঘরটি সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। সকাল ১১ ঘটিকা থেকে বিকাল ৫ ঘটিকা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়।[১]
জাদুঘরে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশ কোন প্রকারের প্রবেশ মূল্য প্রদান করতে হয় না।[১]
চিত্রশালা[সম্পাদনা]
-
খড় কিস্তি ও গলুইয়া নৌকার প্রতিরূপ
-
ময়ূরপঙ্খী নৌকার প্রতিরূপ
-
জাদুঘরের দেয়ালে চারটি নৌকার প্রতিরূপ প্রদর্শিত হচ্ছে
-
আম্বেদকর ভবন
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ "Boat Museum"। www.museumsofindia.org। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২১।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "A unique boat museum in Kolkata pays tribute to Bengal's rivers and their forgotten traditions"। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ "Country's first boat museum inaugurated in Kolkata"। timesofindia.indiatimes.com। ৮ জানুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ "This Kolkata boat museum is the only one of its kind in the country"। www.thehindu.com। দ্য হিন্দু। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ ক খ "Located in Kolkata, the Boat Museum has an interesting display of replicas of heritage boats of Bengal"। www.outlookindia.com। ৩ অক্টোবর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ "ফিরে দেখা নয়, ঘিরে থাকা বাংলার সংস্কৃতির আখ্যান"। bengali.indianexpress.com। ১৮ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ "তিলোত্তমার বুকে ঘোরার অন্যরকম ঠিকানার খোঁজ রইল আপনার জন্য"। www.sangbadpratidin.in। ২২ অগাস্ট ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ "সপ্তডিঙায় পাল তুলে ঘুরে আসুন মঙ্গলকাব্যের যুগে"। www.kolkata24x7.com। ৩০ মার্চ ২০১৭। ২০ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২১।