বিষয়বস্তুতে চলুন

নেছারাবাদ উপজেলা

স্থানাঙ্ক: ২২°৪৪′৪১″ উত্তর ৯০°৬′৮″ পূর্ব / ২২.৭৪৪৭২° উত্তর ৯০.১০২২২° পূর্ব / 22.74472; 90.10222
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নেছারাবাদ
উপজেলা
মানচিত্রে নেছারাবাদ উপজেলা
মানচিত্রে নেছারাবাদ উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২২°৪৪′৪১″ উত্তর ৯০°৬′৮″ পূর্ব / ২২.৭৪৪৭২° উত্তর ৯০.১০২২২° পূর্ব / 22.74472; 90.10222 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগবরিশাল বিভাগ
জেলাপিরোজপুর জেলা
আয়তন
 • মোট২০০.৩৩ বর্গকিমি (৭৭.৩৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা [১]
 • মোট২,৩০,৯৬৬
 • জনঘনত্ব১,২০০/বর্গকিমি (৩,০০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৮৮.২০%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
১০ ৭৯ ৮৭
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

নেছারাবাদ বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

অবস্থান[সম্পাদনা]

উত্তরে বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলা, দক্ষিণে ঝালকাঠি সদর উপজেলা, কাউখালী উপজেলাপিরোজপুর সদর উপজেলা, পূর্বে ঝালকাঠি সদর উপজেলা, পশ্চিমে নাজিরপুর উপজেলাপিরোজপুর সদর উপজেলা

ইতিহাস[সম্পাদনা]

পিরোজপুর জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা বা থানা নেছারাবাদ। ১৭৯০ সালে পিরোজপুর থানার উত্তরাংশে কাউখালী গ্রাম সংলগ্নে কালীগঙ্গা নদীর তীরে কেওয়ারী গ্রামে কেওয়ারী নামে একটি থানা স্থাপিত হয়। কালের প্রবাহে কেওয়ারী গ্রাম কালীগঙ্গা নদীতে বিলীন হয়। পরবর্তীতে সময়ে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ১৯০৬ সালে কেওয়ারী থানা স্থানান্তরিত হয় এবং স্বরূপকাঠীতে উহা পূনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলা-বিহার উড়িষ্যার নবাব আলীবর্দী খানের কাছ থেকে এক সনদ গ্রহণের মধ্য থেকে বাংলা ১১৪৯ সালে (ইংরেজি ১৭৪২ সাল) রতনদি কালিকাপুর পরগনার সৃষ্টি হয়। এ পরগনাটিতপ্পে নাজিরপুরের অংশসহ অন্যান্য অঞ্চল নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে গঠিত হয়। জনৈক রত্নেশ্বরের পুত্র কৃষ্ণ রাম এ পরগনার সঙ্গে সংযুক্ত হন। নাজিরপুর এবং সেলিমাবাদ পরগনার বিচ্ছিন্ন অংশ থেকে এ পরগনার জন্ম।

স্বরূপকাঠী থানা সংশ্লিষ্ট অঞ্চল রতনদি কালিকাপুর পরগনার অর্ন্তগত ছিল। মূল জমিদার এপরগনার রাজস্ব যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারলে, এ জমিদারীর অংশ তিন জনে খরিদ করেন। তারা হলেন, স্বরূপ চন্দ্র গুহ, বৃন্দাবন চক্রবর্তী এবং চন্দ্রনাথ সেন। স্বরূপকাঠীর জমিদার স্বরূপ চন্দ্রগুহের পৈতৃক নিবাস এ অঞ্চলেই ছিল বলে লোকশ্রুতি আছে।

হীরালাল গুপ্তের স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় উদ্বৃত আছে যে, ১৮৮০সালের পূর্বে বরিশালে ১৭ জন উকিল এবং ব্যারিষ্টারের মধ্যে স্বরূপ চন্দ্রগুহ ছিলেন স্বনামধ্যন্য এবং বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। তিনি এতটা সম্মান এবং প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী ছিলেন যে, তার সঙ্গে আর কারো তুলনা হয় না। তিনিআরবি, ফার্সি, উর্দু প্রভৃতি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপন্ন ছিলেন। তার অসাধারণ বক্তৃতা ক্ষমতা ছিল। তার ফার্সি ভাষায় বিশুদ্ধ উচ্চরণের সঙ্গে আইনের বক্তৃতা শোনবার জন্য প্রত্যহ আদালত গৃহে লোকে লোকারণ্য হত। স্বরূপ চন্দ্রগুহ ওকলাতি করে বহু অর্থ উপার্জন করেছিলেন এবং বহু অর্থ ব্যয়ে জমিদারীর অংশ ক্রয় করে, ‘‘রায় চৌধুরী’’ আখ্যা লাভ কনের। ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে (বাংলা ১২৭৬বঙ্গাব্দে) বন্যায় দক্ষিণ শাহবাজপুরের গ্রামগুলো বিধ্বসতস্ত হওয়ায় স্বরূপচন্দ্র ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা বিনা সুদে দুর্গত জনগণের সাহায্যার্থে ঋণ দিয়েছিলেন। এ মহৎ ব্যক্তিত্বের নামে স্বরূপকাঠী থানার নামকরণ হয় বলে কথিত আছে। অন্যদিকে স্বরূপ চন্দ্র গুহের পুত্র গোবিন্দ চন্দ্র গুহের নাম অনুসারে স্বরূপকাঠীর সারেংকাঠী উইনিয়নের একটি গ্রামের নাম গোবিন্দ গুহ কাঠীহয়। এরপর তাকে মুনিনাগ নামে আখ্যায়িত করা হয়। সেখানে এখনও স্বরূপ চন্দ্রগুহের বংশধরেরা বসবাস করছেন।

স্বরূপকাঠী ছিল গভীর জঙ্গল এবং জলাভূমিতে পূর্ণ। স্বরূপ দত্ত নামে জনৈক আবাদকারীজঙ্গল আবাদ করেন। তিনি জঙ্গল আবাদ করে গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বরূপকাঠীরদত্ত পরিবারও তার বংশধর। তার নামে স্বরূপকাঠী হয়েছে বলে অন্য একটি জনশ্রুতি আছে।

অন্যভাবে কথিত আছে যে, এককালে সন্ধ্যা নদীর তীরে গাছপালা, বন বাদারে আবৃত গ্রামটির নয়নাভিরাম দৃশ্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। স্বরূপে তার পরিচিয়ের বিস্মৃতিএবং বিস্তর ঘটে। যার কারণে স্থানটির নাম হয় স্বরূপকাঁটি বা স্বরূপকাঠী। স্বরূপ অর্থ স্বীয় বা নিজ রূপ এবং কাঁটি বা কাঠি অর্থ একনর কন্ঠহার (সোনারকাটিঁ)। ১৯৮৫ সালে শর্ষিণার বিখ্যাত পীর, এ অঞ্চলের বুজর্গ অলি হজরত মাওলানা নেসার উদ্দিন-এর নামে স্বরূপকাঠী থানার নাম পরিবর্তন করে নেছারাবাদ নামকরণ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেন মুহম্মদ এরশাদ। তবে নেছারাবাদ নামটি কাগজপত্রে থাকলেও এলাকাবাসীর কাছে এবং দেশজুড়ে স্বরূপকাঠি নামটিই সমাদৃত ও প্রচলিত।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ[সম্পাদনা]

নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) থানার আওতাধীন।

পৌরসভা:
ইউনিয়নসমূহ:

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

কৃষি পণ্যের উৎপাদন সন্তোষজনক হলেও কাঠ ব্যবসার জন্য স্বরূপকাঠীর নাম দেশব্যপী পরিচিত। কাঠ ব্যবসা এখানকার প্রধান ব্যবসা হলেও বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ শিল্প, বিভিন্ন কুটির শিল্পের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যপক প্রসার ঘটেছে। এছাড়া এখানে নারকেল, সুপারি, পেয়ারা, আমড়া এবং কাঁচা তরকারীর ভাল বাজার রয়েছে,এ এলাকায় প্রচুর পরিমানে মালবাহী ট্রলার রয়েছে।

শিল্প কারখানা[সম্পাদনা]

এ উপজেলায় ১২ টি জাহাজ নির্মান শিল্প রয়েছে। একটি বিসিক শিল্প এলাকা রয়েছে। কিছু চালকল, চিড়ার কল এবং সুতা তৈরির কারখানা রয়েছে।

প্রধান শস্য[সম্পাদনা]

ধান, পেয়ারা, আমড়া, সুপারি, নারিকেল, কলা, পান মুড়ি।

জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]

২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী নেছারাবাদ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২,৩০,৯৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,১৩,৬৬২ জন এবং মহিলা ১,১৭,৩৪৪ জন। মুসলিম ১,৭৬,৬৪৯, সনাতন ৫৬,৩১৭, বৌদ্ধ ৯৬, খ্রিষ্টান ৯, অন্যান্য ৯। মোট পরিবার ৪৮৪৯২ টি। ।[২]

শিক্ষা[সম্পাদনা]

২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার সাক্ষরতার হার ৮৮.২০%।[২]

  1. মহাবিদ্যালয় ৯ টি
  2. মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯৭টি
  3. সরকারি প্রা: বিদ্যালয় ৯২টি
  4. রেজি: প্রাথ: বিদ্যালয় ৪৩টি
  5. আলিয়া মাদ্রাসা ৪১টি
  6. উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭টি
  7. কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ ২১টি
  8. কিন্টার গার্ডেন স্কুল ৩২টি
  9. হোমিও কলেজ ১টি
  10. কওমি মাদ্রাসা ৫টি

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি[সম্পাদনা]

চিকিৎসা[সম্পাদনা]

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪১, প্রাইভেট ক্লিনিক ২, কমিউনিটি ক্লিনিক ২২ ও ইপিআই কেন্দ্র ২৪১।

দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]

  • ছারছিনা দরবার শরীফ
  • আলহাজ্ব বজলুর রহমান খান ভবন, সেহাংগল (হাশেম আলী খানের জন্মস্থান ও আঠারো শতকের জমিদার বাড়ি)।[৩]
  • কুড়িয়ানা অনুকুল ঠাকুরের আশ্রম।
  • কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান।
  • সাত ব্যক্তির এক কবর।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে নেছারাবাদ উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৫ 
  2. "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (পিডিএফ)web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯ 
  3. "দর্শনীয় স্থান"। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০২৪ 
  4. "স্বরুপকাঠিতে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িয়ে আছে"সাত ব্যক্তির এক কবর'"। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০২৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]