কানাইলাল দত্ত
কানাইলাল দত্ত | |
---|---|
![]() কানাইলাল দত্ত | |
জন্ম | ৩১ আগস্ট, ১৮৮৮ চন্দননগর |
মৃত্যু | ১০ নভেম্বর, ১৯০৮ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ![]() |
পরিচিতির কারণ | বিপ্লবী |
পিতা-মাতা | চুনীলাল দত্ত, ব্রজেশ্বরী দেবী |
অনুশীলন সমিতি |
---|
![]() |
প্রভাব |
অনুশীলন সমিতি |
উল্লেখযোগ্য ঘটনা |
সম্পর্কিত প্রসঙ্গ |
কানাইলাল দত্ত (ইংরেজি: Kanailal Dutt; ৩১ আগস্ট ১৮৮৮ – ১০ নভেম্বর ১৯০৮) ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী ছিলেন। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের মধ্যে বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হওয়া নরেন্দ্রনাথ গোস্বামীকে হত্যা করার জন্য তাঁর ফাঁসি হয়।
জন্ম ও শিক্ষা[সম্পাদনা]
কানাইলাল দত্ত ১২৯৫ বঙ্গাব্দে জন্মাষ্টমী তিথিতে চন্দননগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম চুনীলাল দত্ত ও মাতার নাম ব্রজেশ্বরী দেবী। পিতা বোম্বাইতে হিসাবরক্ষকের কাজ করতেন। কানাইলাল শৈশবে বোম্বাইয়ের গিরগাঁও এরিয়ান এডুকেশন সোসাইটি স্কুলে এবং পরবর্তী সময়ে চন্দননগর ডুপ্লে বিদ্যামন্দিরে (বর্তমান কানাইলাল বিদ্যামন্দির) অধ্যয়ণ করেন। ১৯০৮ সালে হুগলি মহসীন কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বিপ্লব ও রাজদ্রোহিতার অভিযোগে কারারুদ্ধ হওয়ায় ইংরেজ সরকার তাঁকে ডিগ্রি প্রদানে বাধা দেয়, কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সে বাধা উপেক্ষা করে তাঁকে ডিগ্রি প্রদান করে।[১][২]
![](http://chped.net/https/upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/a/ae/Birth_place_of_Kanailal.jpg/220px-Birth_place_of_Kanailal.jpg)
বিপ্লবী জীবন[সম্পাদনা]
চন্দননগরের ডুপ্লে কলেজের অধ্যক্ষ চারুচন্দ্র রায়ের কাছে কানাইলাল বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষা নেন এবং অস্ত্রচালনা শিক্ষা করেন। চন্দননগরে নিজের চেষ্টায় অনেকগুলি বিপ্লবী সমিতি গড়ে তোলেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় চাকরিচ্যুত বাঙালি কেরাণীদের জন্য স্বদেশী সাহায্যভাণ্ডার গড়ে তোলেন। বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর সাথে ছাত্রাবস্থাতেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তাঁর। বি.এ. পরীক্ষা দিয়ে কলকাতার বিপ্লবী দলের কার্যকলাপে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য তিনি প্রথমে মনোনীত হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে মতিলাল রায় লিখেছেন -
গঙ্গাতীরে পদচারণা করিতে-করিতে কানাইলাল আমায় জানাইল-. তাহার ডাক আসিয়াছে, তাহাকে বাড়ী ছাড়িতে হইবে। | আমি সবিস্ময়ে তাহার মুখের দিকে চাহিলাম। দীর্ঘ নাসিকা। দুটি ওষ্ঠপুটের ফাঁকে হাসির জ্যোৎস্না ঠিকরাইয়া বাহির হইতেছে।কানাইলাল স্মিতমুখে বলিল “উপস্থিত কলিকাতায় যাইব। পি-এম. করার খাঁটী লােকের অভাব হইয়াছে।...আমি প্রাণের চেয়ে পি.এম্. যাহাতে কার্য্যকর হয়, সেই দিকেই বিপ্লবীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিব।"
কিংসফোর্ড হত্যার চেষ্টায় কানাইলালের পরিবর্তে প্রফুল্ল চাকীর সঙ্গে ক্ষুদিরাম বসু মজঃফরপুর যাত্রা করেন। তখন কানাইলাল বারীন ঘোষের দলের সঙ্গে কলকাতায় বোমা তৈরির কাজে যোগ দেন। ১৯০৮ সালের ২ মে তিনি উত্তর কলকাতার ১৫ নম্বর গোপীমোহন দত্ত লেন থেকে মানিকতলা বোমা মামলায় অস্ত্র আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।
নরেন গোঁসাই হত্যা[সম্পাদনা]
কানাইলাল দত্ত রাজসাক্ষী নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী ওরফে নরেন গোঁসাইকে হত্যা করতে মনস্থির করেন। এইসময় নরেন গোঁসাইকে পুলিশ কড়া নিরাপত্তায় জেলের ভেতরে রেখেছিল। বিপ্লবী শ্রীশচন্দ্র ঘোষ চাতুর্যের সাথে তাকে একটি রিভলভার যোগাড় করে দেন। অসুস্থতার অজুহাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বিশ্বাসঘাতক নরেন গোঁসাইকে অপর বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সহযোগিতায় জেলের ভেতরেই ৩১ আগস্ট ১৯০৮ সালে হত্যা করেন তিনি। বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয়।
মৃত্যু[সম্পাদনা]
![](http://chped.net/https/upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/6/6c/Kanailal_Dutta_revolver.jpg/220px-Kanailal_Dutta_revolver.jpg)
তিনি দণ্ড রোধের জন্যে উচ্চতর আদালতে আপিল করার দৃঢ় বিরোধিতা করেছিলেন, তাই আবেদন করা হয়নি। ১০ নভেম্বর, ১৯০৮ তারিখে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন। অপর বিপ্লবী সত্যেন বসুও ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হন।[১][৩]
শৈশব থেকেই কানাইলালের শারীরিক অসুস্থতা কিছু বেশিই ছিল। কিন্তু ফাঁসির আগে তার ওজন বেড়ে গিয়েছিল প্রায় ষোলো পাউন্ড এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। এ প্রসঙ্গে উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তার "নির্ব্বাসিতের আত্মকথা" গ্রন্থে লিখেছেন -
"জীবনে অনেক সাধুসন্ন্যাসী দেখিয়াছি ; কানাইএর মত আমন প্ৰশান্ত মুখচ্ছবি আর বড় একটা দেখি নাই। সে মুখে চিন্তার রেখা নাই, বিষাদের ছায়া নাই, চাঞ্চল্যের লেশ মাত্র নাই - প্ৰফুল্ল কমলের মত তাহা যেন আপনার আনন্দে আপনি ফুটিয়া রহিয়াছে। চিত্ৰকূটে ঘুরিবার সময় এক সাধুর কাছে শুনিয়াছিলাম যে, জীবন ও মৃত্যু যাহার কাছে তুল্যমূল্য হইয়া গিয়াছে সেই পরমহংস। কানাইকে দেখিয়া সেই কথা মনে পড়িয়া গেল। জগতে যাহা সনাতন, যাহা সত্য, তাহাই যেন কোন শুভ মুহূৰ্ত্তে আসিয়া তাহার কাছে ধরা দিয়াছে।--আর এই জেল, প্রহরী, ফাঁসিকাঠ, সবটাই মিথ্যা, সবটাই স্বপ্ন ! প্রহরীর নিকট শুনিলাম ফাঁসির আদেশ শুনিবার পর তাহার ওজন ১৬ পাউণ্ড বাড়িয়া গিয়াছে!! ঘুরিয়া ফিরিয়া শুধু এই কথাই মনে হইতে লাগিল যে, চিত্তবৃত্তিনিরোধের এমন পথও আছে যাহা পতঞ্জলিও বাহির করিয়া যান নাই। ভগবানও অনন্ত, আর মানুষের মধ্যে তাঁহার লীলাও অনন্ত !
তাহার পর একদিন প্ৰভাতে কানাইলালের ফাঁসি হইয়া গেল। ইংরাজশাসিত ভারতে তাহার স্থান হইল না। না হইবারই কথা ! কিন্তু ফাঁসির সময় তাহার নির্ভীক, প্ৰশান্ত ও হাস্যময় মুখশ্ৰী দেখিয়া জেলের কর্তৃপক্ষরা বেশ একটু ভ্যাবাচাকা হইয়া গেলেন। একজন ইউরোপীয় প্রহরী আসিয়া চুপি চুপি বারীনকে জিজ্ঞাসা করিল— “তােমাদের হাতে এ রকম ছেলে আর কতগুলি আছে?” যে উন্মত্ত জনসঙ্ঘ কালীঘাটের শ্মশানে কানাইলালের চিতার উপর পুষ্প, বর্ষণ করিতে ছুটিয়া আসিল, তাহারাই প্রমাণ করিয়া দিল যে, কানাইলাল মরিয়াও মরে নাই।"
ক্ষুদিরাম বসুর পরে তিনিই ফাঁসিমঞ্চে প্রাণ উৎসর্গ করা প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ। তার কর্ম ও বীরোচিত মৃত্যু সমগ্র জাতিকে উদ্ধুদ্ধ করে।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, দ্বিতীয় মুদ্রণঃ নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ১১৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ১১৭, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৩৫৪-৬
- ↑ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, জেলে ত্রিশ বছর, পাক-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, ঢাকা, ঢাকা বইমেলা ২০০৪, পৃষ্ঠা ১৯০।
- ১৮৮৮-এ জন্ম
- ১৯০৮-এ মৃত্যু
- অনুশীলন সমিতি
- পশ্চিমবঙ্গের বিপ্লবী
- ভারতীয় বিপ্লবী
- কলকাতার বিপ্লবী
- পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী
- হুগলি জেলার ব্যক্তি
- মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিপ্লবী
- ২০শ শতাব্দীতে যুক্তরাজ্য দ্বারা মৃত্যুদণ্ড
- পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ব্যক্তি
- ভারতীয় গুপ্তঘাতক
- ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদ
- বাঙালি বিপ্লবী
- ব্রিটিশ ভারত দ্বারা ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
- মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ভারতীয় ব্যক্তি
- ভারতীয় স্বাধীনতার বিপ্লবী আন্দোলন
- ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী
- ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন কর্মী
- ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার বিপ্লবী
- ভারতীয় জাতীয়তাবাদ
- গুপ্তঘাতক যার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে
- হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ভারতীয়
- হুগলী মহসিন কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী